ঐক্যবদ্ধ জার্মানির প্রতিষ্ঠাতা অটো ফন বিসমার্ক ছিলেন কূটনীতির জাদুকর । তার কূটনৈতিক দক্ষতা ,রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও গঠনমূলক দৃষ্টির জন্য ইতিহাসে তিনি এক প্রবাদপুরুষে পরিণত হয়েছেন । তিনি রিয়েল পলিটিক বা বাস্তব রাজনীতির প্রবর্তক ছিলেন অর্থাৎ শত্রুপক্ষকে মিত্রহীন করে লক্ষ্য সাধন করাই ছিল তার নীতির মূল লক্ষ্য । বিসমার্কের বাস্তবমুখী কূটনীতিতে ন্যায় নীতি ছিল গৌণ । শত্রুকে পরাজিত করার জন্য যেকোনো কাজ করতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করতেন না । বিসমার্ক তার আত্মজীবনীতে বলেন যে এথিক্স বা ন্যায়নীতি ব্যক্তির জীবনে বাধ্যতামূলক হলেও রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এই গোঁড়ামি না করাই ভালো । সমকালীন যুগে তার সফলতার কারণে তিনি প্রশংসিত হলেও পরবর্তীকালে তিনি সমালোচিত হন । তিনি জার্মানির ঐক্য সাধনের জন্য রক্ত ও লৌহ নীতি প্রয়োগ করেন । তিনি বলেন যুদ্ধ এবং সফল কূটনীতির মাধ্যমেই জার্মানির ঐক্য সম্ভব ।
জার্মানির ঐক্য সাধনের জন্য তাকে ডেনমার্ক , অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মোট তিনটি যুদ্ধ করতে হয় । প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ক বলেন ডেনমার্কের রাজা 1852 সালের লন্ডন চুক্তি ভঙ্গ করেছেন । বিসমার্ক ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে থাকা ডার্চি দুটির ক্ষেত্রে পূর্বের অবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিলে ডেনমার্কের রাজা তা অমান্য করেন । বিসমার্ক এর নেতৃত্বে 1লা ফেব্রুয়ারি অস্ট্রিয়া প্রাশিয়ার সেনারা ডার্চি দুটিতে প্রবেশ করে । যুদ্ধে ডেনমার্কের বাহিনী পরাজিত হয় । 1864 সালে ভিয়েনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । রাজা নবম ক্রিশ্চিয়ান চুক্তির শর্ত মেনে স্লেজভিগ ও হলস্টিনের ওপর কর্তৃত্ব ছেড়ে দেন । ডাচি দুটিতে প্রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ।
বিসমার্ক প্রাশিয়াবাসীকে বুঝিয়ে দেন অস্ট্রিয়াকে যুদ্ধের দ্বারা জার্মানি থেকে বহিষ্কার করে প্রাশিয়ার অধীনে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে । এটাই ইতিহাসের নির্দেশ । প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়াম ভ্রাতৃপ্রতিম জার্মান দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে ইতস্ততঃ দেখালে তাকে ভর্ৎসনা করে বলেন প্রাশিয়ার স্বার্থে অস্ট্রিয়াকে বহিস্কার করতে হবে । ক্ষুদ্র প্রাশিয়া এই অসম যুদ্ধে সফল হবে কিনা এটা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন । বিসমার্ক তাদের বলেন যখন একটি নেকড়ে বাঘ এক পাল মেষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন সে কতগুলি মেষ আছে গুনে দেখেনা । তার সাহস ও তেজ তাকে সফলতা দেয় । বিসমার্ক কূটনীতির দ্বারা অস্ট্রিয়াকে মিত্রহীন করেন ,এর ফলে অস্ট্রিয়াকে প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাই লড়তে হয় এবং অস্ট্রিয়ার পরাজয় হয় । উল্লেখ্য , তিনি প্রাশিয়া অস্ট্রিয়া যুদ্ধের সময় ফ্রান্সকে নিরপেক্ষ রাখেন । 1866 খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার মধ্যে 49 দিন ধরে স্যাডোয়ার যুদ্ধ চলে । শেষ পর্যন্ত অস্ট্রিয়া এই যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয় ।
এরপর বিসমার্ক ফ্রান্সের শত্রুতায় বিরক্ত হয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন তিনি তৃতীয় নেপোলিয়নের বৈদেশিক নীতির ভুলগুলি ব্যবহার করে ফ্রান্সকে মিত্রহীন করেন । স্পেনের সিংহাসন উপলক্ষে তিনি এমন কূটনৈতিক কৌশল দেখান যে ফ্রান্সই জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আক্রমণকারী রূপে চিহ্নিত হয় । তৃতীয় নেপোলিয়নের পতন হয় । ফ্রাঙ্কফুর্টের সন্ধি দ্বারা ফ্রান্স নতজানু হয়ে আলসাস ও লোরেন ছেড়ে দেয় । দক্ষিণ জার্মানি মূল জার্মানির সঙ্গে সংযুক্ত হয় । বিসমার্ক এক সংবিধান দ্বারা ঐক্যবদ্ধ জার্মানির প্রতিষ্ঠা করেন ।
স্পেনের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত ফরাসি দূত বেনেদিতের সঙ্গে রাজা উইলিয়ামের আলোচনার বিষয়টি রাজা উইলিয়াম এমস থেকে টেলিগ্রাম মারফত জানান । বিসমার্ক টেলিগ্রামের কিছু অংশ বাদ দিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশ করেন । এরফলে জার্মানবাসীর ধারণা হয় ফরাসি দূত রাজাকে অপমান করেছেন , ফরাসিবাসীর ধারণা হয় রাজা উইলিয়াম ফরাসী দূতকে অপমান করেছেন । এর ফলে শুরু হয় ফ্রাঙ্কো প্রাশিয়া যুদ্ধ যা সেডানের যুদ্ধ নামে পরিচিত ( 1870 খ্রীস্টাব্দ )। এই বিষয়টি এমস টেলিগ্রাম নামে পরিচিত ।
এখান থেকে তোমরা যে প্রশ্নগুলো করবে , বিসমার্ককে কেন কূটনীতির জাদুকর বলা হয় , রক্ত ও লৌহ নীতি কে প্রবর্তন করেন , বিসমার্ক জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কয়টি যুদ্ধ করেন , সেডানের যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল , স্যাডোয়ার যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল , এমস টেলিগ্রাম বলতে কী বোঝো ?
কোন প্রশ্ন থাকলে বা কিছু জানার থাকলে এই হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে জানাতে হবে 8597510299 .