নেপোলিয়নের পতনের পর ইউরোপের বিজয়ী মিত্রশক্তিবর্গ অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে এক সম্মেলনে মিলিত হন ।এই সম্মেলনের দুটি উদ্দেশ্য ছিল নেপোলিয়নের পক্ষ গ্রহণকারী দেশ গুলির শাস্তি বিধান এবং ইউরোপের পুনর্গঠন । সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দিলেও আসল ক্ষমতা ছিল চারটি শক্তির হাতে - ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ,রাশিয়া ,ও প্রাশিয়া । এই সম্মেলনের মধ্যমনি ছিলেন অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিক । উপস্থিত ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্যাসালরি ,রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার ।এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পরাজিত ফ্রান্সের প্রতিনিধি ত্যালিরা । ভিয়েনা সম্মেলনে তিনটি নীতি নেওয়া হয়েছিল - ন্যায্য অধিকার নীতি , শক্তিসাম্য নীতি ও ক্ষতিপূরণ নীতি ।
ন্যায্য অধিকার নীতি অনুসারে নেপোলিয়নীয় বিপ্লবের পূর্বে ইউরোপে যে বংশগুলি রাজত্ব করত তাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা । এই নীতি অনুসারে ফ্রান্সের সিংহাসনে বুরবো রাজবংশকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয় । ক্ষতিপূরণ নীতি অনুসারে নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ভূখণ্ড প্রদান করা হয় । শক্তিসাম্য নীতি অনুসারে ইউরোপে একক শক্তি বা নেপোলিয়নের মত একক ব্যক্তির আধিপত্য রোধ করা হয় ।এর সঙ্গে ফ্রান্সের শক্তি ক্ষয় করা হয় এবং ফ্রান্সের সীমানাকে সেইভাবে নির্ধারণ করা হয় ।
মেটারনিখ ১৮০৮ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ছিলেন । ১৮১৫ থেকে১৮৪৮ খ্রীষ্টাব্দ এই সময়কালে তিনি ইউরোপের মধ্যমনি হয়ে গিয়েছিলেন । এই সময়কালে ইউরোপের রাজনীতি তারই নির্দেশ ও পরিচালনায় চালিত হয়েছিল । তিনি অস্ট্রিয়াকে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেন । তার উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপে পুরাতনতন্তর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা । তার মতে বিপ্লবী ভাবধারা একটি সংক্রামক ব্যাধির মতো এবং তা এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিস্তারিত হয় এবং প্রতিষ্ঠিত রাজবংশকে ভেঙে ফেলে । এই কারণে নেপোলিয়নের পতনের পর তিনি বিপ্লবী ভাবধারার গতিরোধ করেন , ইউরোপে পুরাতন রাজবংশগুলিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন এবং স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলেন । জার্মানিতে অস্ট্রিয়ার আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এবং বিপ্লবী ভাবধারার প্রসার রোধ করার জন্য কার্লসবাড ডিক্রি জারি করেন ১৮১৯ খ্রীষ্টাব্দে ।এর ফলে জার্মানিতে - সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয় ,উদারপন্থী অধ্যাপকরা বিতাড়িত হন ,বিপ্লবী ছাত্ররা কারারূদ্ধ হন , বিপ্লবী ছাত্র ও অধ্যাপকদের উপর নজর রাখার জন্য একটি কমিশন গঠিত হয় ।
1815 থেকে 1848 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে মেটারনিক তন্ত্র বলা হয় কারণ এই সময়ে ইউরোপের রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি পুরোপুরি মেটারনিকের নির্দেশ ও প্রয়োগকৌশলে চালিত হয়েছিল । তবে মেটারনিকতন্ত্রের একটা সুফল ছিল । এই সময়কালে ইউরোপ যুদ্ধমুক্ত হয়ে থাকে । এর ফলে তার শিল্প-সংস্কৃতি প্রভৃতির বিকাশ ঘটে । 1848 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের আঘাতে মেটারনিকতন্ত্রের পতন ঘটে । পতনের কারণগুলি ছিল মেটারনিখতন্ত্র কোন গণতান্ত্রিক ভাবধারার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেনি । এটা ছিল পুরোপুরি যুগধর্ম বিরোধী । রক্ষণশীলতার প্রাচীর তুলে যুগের হাওয়াকে বেশি দিন আটকে রাখা মেটারনিকতন্ত্রের পক্ষে সম্ভব হয়নি । এই কারণে মেটারনিকতন্ত্রের পতন হয় । মেটারনিক ইংল্যান্ডে পালিয়ে যান ।
ছাত্র-ছাত্রীরা এখান থেকে কয়েকটা প্রশ্ন করবে - ভিয়েনা সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ,ভিয়েনা সম্মেলনের চার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব কারা ছিলেন, ভিয়েনা সম্মেলনের মধ্যমনি কারা ছিলেন ,ভিয়েনা সম্মেলনের তিনটি নীতি কি ছিল ,মেটারনিকতন্ত্র বলতে কী বোঝো , মেটারনিক তন্ত্রের কেন পতন হয় , কার্লসবার্ড ডিগ্রী বলতে কী বোঝো এগুলো করবে ।
আবার আমি তোমাদের সঙ্গে অনলাইন ক্লাসে আসবো । তোমরা সবাই বাড়িতে থাকবে , সুস্থ থাকবে । নমস্কার ।
No comments:
Post a Comment