Tuesday, 14 April 2020

নবম শ্রেণীর অনলাইন ইতিহাস ক্লাস , চতুর্থ অধ্যায় ।

       চতুর্থ অধ্যায় , শিল্প বিপ্লব, উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ ।
যখন হস্তচালিত উৎপাদনের বদলে যন্ত্রনির্ভর উৎপাদন হয় সেই ব্যবস্হাকে বলা হয় শিল্পবিপ্লব । এর ফলে অনেক কম সময়ে , কম পরিশ্রমে , কম খরচে , অধিক উৎপাদন করা যায় । ফরাসি সমাজতান্ত্রিক অগাস্তি ব্ল্যাংকি 1837 খ্রিস্টাব্দে শিল্প বিপ্লব কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন । পরে ইংরেজ ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবি এই নামটি প্রয়োগ করেন । আঠারো শতকের শেষ পর্বে ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্প বিপ্লব দেখা দেয় পরে তা ফ্রান্স ,বেলজিয়াম ,জার্মানি ,রাশিয়া প্রভৃতি দেশে বিস্তার লাভ করে । 
      বিপ্লবের ফলে প্রথমে যে পরিবর্তনগুলি এসেছিল সেগুলি হল 1733 খ্রিস্টাব্দে জন কে ফ্লাইং শাটল উড়ন্ত মাকু আবিষ্কার করেন ,1765 খ্রিস্টাব্দে জেমস হারগ্রিভস সুতো কাটার যন্ত্র স্পিনিং জেনি আবিষ্কার করেন । আর্করাইট ওয়াটার ফ্রেম আবিষ্কার করেন । 1769 খ্রিস্টাব্দে জেমস ওয়াট আবিষ্কার করেন বাষ্পচালিত ইঞ্জিন । হামফ্রে ডেভি আবিষ্কার করেন খনিতে শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য সেফটি ল্যাম্প । ম্যাকডাম  আবিষ্কার করেন পিচ রাস্তা তৈরীর কৌশল। 
      আর্নল্ড টয়েনবির মতে 1760 খ্রিস্টাব্দে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয় । হফম্যানের মতে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল 1780 খ্রিস্টাব্দে । 
      ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব হয়েছিল তার কারণ ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের অনুকূল পরিবেশ ছিল । শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রথমে দরকার কৃষি বিপ্লব এবং সেটা ইংল্যান্ডে হয়েছিল । এছাড়া , ইংল্যান্ডের শাসকদের শিল্পের প্রতি আগ্রহ ছিল , ইংল্যান্ডের কৃষকরাও শহরে এসে কারখানায় কাজ করতে আগ্রহী ছিল , শিল্পের জন্য প্রয়োজন উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সেটা ইংল্যান্ডে হয়ে গিয়েছিল । শিল্প বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মূলধন ও কাঁচামাল । এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলোতে উপনিবেশ বিস্তারের ফলে মূলধন ও শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহে সুবিধে হয় । উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে বস্ত্র শিল্পের জন্য কাঁচামাল হিসেবে তুলোর প্রয়োজন যেটা উপনিবেশ থেকে সরবরাহ হয়েছিল আবার শিল্পে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য বাজার দরকার এক্ষেত্রে উপনিবেশগুলির বিরাট বাজার ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবে সহায়তা করেছিল । বাংলায় পলাশীর যুদ্ধের পর কোম্পানি বিভিন্ন পন্থায় প্রভূত অর্থ ভারত থেকে বিলেতে পাচার করেছিল সেই অর্থ ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবে মূলধন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল । এছাড়া শিল্প বিপ্লবের জন্য দরকার প্রযুক্তি যেটাতে ইংল্যান্ড এগিয়ে ছিল । এক্ষেত্রেও পলাশীর যুদ্ধের পর ভারত থেকে পাওয়া বিপুল অর্থ ইংল্যান্ড বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও গবেষণার কাজে ব্যয় করেছিল । ইংল্যান্ডে এই সময় সুলভে শ্রমিকও পাওয়া যেতো । 
         ফান্স , জার্মানি , রাশিয়া প্রভৃতি দেশে শিল্প বিপ্লব দেরিতে হয়েছিল। ফ্রান্সের ক্ষেত্রে শাসকদের শিল্পের প্রতি কিছুটা উদাসীনতা ছিল , ফ্রান্সে অর্থ থাকলেও সেটা ফরাসি রাজপরিবারের অমিতব্যয়িতায় নষ্ট হয় , ফ্রান্সের বুরবো রাজপরিবার ভেবেছিল শিল্প হলে সমাজব্যবস্থায় ও মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে ,শহরের প্রতিষ্ঠা হবে ,গ্রামীণ সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়বে আর তাতে বুরবো বংশ তার স্বৈরাচারী আধিপত্য হারাবে । এছাড়া ফ্রান্স যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল । ফ্রান্সের মানুষ গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থা ছেড়ে শহরের শিল্পে শ্রমিকের কাজ করতে খুব একটা আগ্রহী ছিল না । ফ্রান্সের তখনো পর্যন্ত উপনিবেশ ছিল না ফলে শিল্পের জন্য কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যের বাজারের অভাব ছিল ।
        জার্মানিতে শিল্প বিপ্লব বিলম্বিত হয়েছিল কারণ জার্মানি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং রাজ্যগুলির মধ্যে কোন ঐক্য ছিলনা । পরবর্তীকালে জোলভেরিন বা শুল্কসঙ্ঘ গড়ে উঠলে জার্মানির শিল্প বিপ্লবের পথ প্রশস্ত হয়েছিল । মূলত বিসমার্কের প্রচেষ্টায় জার্মানিতে শিল্প বিপ্লবের অনুকূল ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল।
        রাশিয়াতে অনেক পরে শিল্পবিপ্লব হয় কারণ রাশিয়ায় জারের শাসনে রাশিয়া ছিল একটি কৃষি ভিত্তিক অনগ্রসর রাষ্ট্র ।রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথা প্রচলিত ছিল এবং রাশিয়ায় অর্থনীতির ভিত্তি ছিল ভূমি দাস । শিল্প হলে সাবেকি সমাজ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তো ।জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার 1861 খ্রিস্টাব্দে ভূমিদাসদের মুক্তি দেন । মুক্তিপ্রাপ্ত ভূমিদাসরা শ্রমিকের কাজ করতে থাকে ।এভাবে রাশিয়ায় শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল ।
      শিল্প বিপ্লবের ফলে সমাজব্যবস্থায়, অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন এসেছিল ।গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির স্হলে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা হয় । সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোতে ভাঙন ধরে । এতদিন সামন্তদের দ্বারা কৃষকেরা শোষিত হয়েছিল এখন শিল্প মালিকদের দ্বারা শ্রমিকেরা শোষিত হয় । সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতি ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে পরিণত হয় । বড় বড় শহর ও বৃহৎ কারখানা গড়ে ওঠে । শ্রমিকেরা গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে এবং কারখানা সংলগ্ন এলাকাতে বস্তি করে বসবাস করতে থাকে । পুঁজিবাদ ও শোষণ থেকেই সমাজতন্ত্রবাদের উদ্ভব হয় । মূলত কাল মার্কস ও অ্যাঙ্গেলস সমাজতন্ত্রবাদের উদ্ভব ও প্রসার ঘটিয়েছিলেন । শিল্প বিপ্লবের আরেকটি তাৎপর্য ছিল উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার কারণ শিল্পের জন্য প্রয়োজন মূলধন ,কাঁচামাল এবং শিল্পে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য বাজার দরকার । নিজ দেশে সেটা সীমিত তাই প্রয়োজন হল উপনিবেশ গড়ে তোলা । প্রথমদিকে ইংল্যান্ড একাই শিল্প গড়ে তোলে ও উপনিবেশ বিস্তার করে । পরবর্তীকালে তার রাস্তায় ফ্রান্স, জার্মানি ,রাশিয়া প্রভৃতি শিল্পোন্নত দেশগুলি আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করলে শুরু হয় ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা এবং সাম্রাজ্যবাদ ।
       শিল্প বিপ্লবের আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল নারীরা গৃহকোন থেকে বেরিয়ে আসে এবং শিল্পে শ্রমিকের কাজ শুরু করে । শিল্পমালিকরা নারী শ্রমিকদের কাজে নিয়োগ করতে আগ্রহী ছিল কারণ তারা মালিকের অনুগত ছিল এবং সহজে বিদ্রোহ করতনা । নারী শ্রমিকদের এবং শিশুশ্রমিকদের পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় কম বেতন দেওয়া হতো ।
      আজকের ক্লাস থেকে যে প্রশ্নগুলি করতে হবে সেগুলি হল - শিল্প  বিপ্লব বলতে কী বোঝো , শিল্প বিপ্লবের বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি , কোন দেশে প্রথম শিল্প বিপ্লব হয়েছিল ,শিল্প বিপ্লব কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেছিলেন , কবে প্রথম শিল্প বিপ্লব হয়েছিল , ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব হয়েছিল কেনো , ইউরোপের অন্যান্য দেশে শিল্প বিপ্লব বিলম্বে ঘটেছিল কেনো , শিল্প বিপ্লবের ফলে কি কি পরিবর্তন এসেছিল , শিল্প বিপ্লব উপনিবেশবাদ এর জন্ম দেয় কেনো ,এগুলো । 
        আবার পরবর্তী ক্লাস হবে এবং নতুন প্রশ্ন দেওয়া হবে । ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবক অভিভাবিকাদের কোন প্রশ্ন থাকলে এই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে লিখে পাঠাতে হবে ,হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর হলো - 9932881330 . সবাই বাড়িতে থাকুন ও সুস্থ থাকুন । নমস্কার।

No comments:

Post a Comment

বাংলায় এই প্রথম করোনা মোকাবিলায় বসানো হল স্যানিটাইজেসন টানেল ।

কলকাতা পুরসংস্থার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের তরফে এই প্রথম শহরে  এক সাথে বসানো হল  দুটি স্যানিটাইজেসন টানেল ,পাটুলি ও রামগড় বাজারে।এই টানেলে প্রবেশ ...