Saturday, 28 March 2020

নেতাজী অর্ন্তধান নিয়ে ভারত নিউজের নিজস্ব বিশ্লেষণ ।


ভারত নিউজ : নেতাজীর মৃত্যু নিয়ে অফিসিয়ালি বলা হয় তিনি তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন কিন্তু যদি নিছকই দুর্ঘটনা হয় তাহলে সেটা নিয়ে এতো কেনো গোপনীয়তা বছরের পর বছর । এরকম তো কতো বিমান দুর্ঘটনাই ঘটে থাকে । নেতাজীর মৃত্যু সংক্রান্ত ফাইলগুলো উন্মুক্ত করে দিলেই সব জল্পনার অবসান হয়ে যাবে । সেইসঙ্গে একটা ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করে দিলেই হয় । একটা খুব কমন সেন্স কি বলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে কোনও গোপনীয়তা থাকতে পারে কি ?
                         আরেকটা তত্ত্ব স্বাধীনতার পর তিনি ঘৃণায় দেশে ফিরতে চাননি । তিনি তো এই অভাগা দেশটাকে গড়তে চেয়েছিলেন তাহলে তিনি দেশে না ফিরে দেশটাকে গড়বেন কি করে ? তিনি তো দেশের সমস্যার মুখোমুখি হতে চেয়েছিলেন তাই নিজের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন । আর সেটাই যদি হয় তাহলে এতো গোপনীয়তা কেন নেতাজী সংক্রান্ত ফাইলগুলো প্রকাশ করতে ? ফাইল প্রকাশ করে জানিয়ে দিলেই হয় তিনি ঘৃণায় আর দেশে ফিরতে চাননি । জল্পনারও অবসান হয় ।
                         যে গুমনামি বাবার গল্প বছরের পর বছর শোনানো হয়, ভেবে দেখুন তো যার পদচারণায় আসমুদ্র হিমাচল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কেঁপে ওঠে সেই সুভাষচন্দ্র নিজেকে বাঁচাতে আত্মগোপন করে থাকবেন, এটা কি তাঁর চরিত্রের সঙ্গে মানানসই গল্প ? হিটলার পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে বিস্মিত হয়েছিলেন, সেই নেতাজী একটা চুক্তির ভয়ে পালিয়ে বেড়াবে এটা কি হতে পারে ? গুমনামি বাবার গল্পটা মূল প্রশ্ন থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য বানানো হয়েছে । 
                         নেতাজী যদি আত্মগোপন করে থাকতেন তাহলে তিনি তো গোপন জায়গা থেকেই ভারতবাসীকে বার্তা দিতে পারতেন । তাহলে, ধরে নেওয়া যেতে পারে তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল যাতে কোনওভাবে প্রকাশ্যে আসতে না পারেন এবং বার্তা না পাঠাতে পারেন ।
                         যদি এরকম কোনও চুক্তি হয়ে থাকে নেতাজী প্রকাশ্যে এলেই তাঁকে ভারত সরকার যুদ্ধবন্দি হিসেবে ব্রিটেনের হাতে তুলে দিতে বাধ্য থাকবে, বাস্তবে পারতোনা । স্বাধীন ভারত সরকার পারতোনা । জনমতের চাপে , জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের কাছে ভারত ও ব্রিটিশ সরকার পারতোনা একটি ষড়যন্ত্রমূলক চুক্তিতে তাঁকে আটক করতে । কারণ, নেতাজী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী । তিনি মুক্ত অবস্হায় কোথাও অবস্হান করলে নিশ্চিতভাবেই দেশবাসীকে বার্তা দিতেন । চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ফিরে আসতে পারতেন । যদি নেতাজী গোপন জায়গা থেকেও ভারতবাসীকে বার্তা পাঠাতেন আসমুদ্র হিমাচল ভারতবাসী  রাস্তায় নেমে যেত ।
                          রেনকোজি মন্দিরে রাখা নেতাজীর চিতাভস্মের ডিএনএ টেস্টের দাবি বারবার তোলা হলেও করা হয়নি একটাই কারণে তাহলে প্রমাণিত হয়ে যাবে ওটা নেতাজীর চিতাভস্ম নয় ।
                          নেতাজী থাকলে কিছুজন কোনদিনই ভারতের ক্ষমতালাভ করতে পারতেননা । স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু । অপরদিকে ব্রিটিশরা চেয়েছিল ভারত ছাড়ার আগে তাকে দুর্বল করে দেওয়া যাতে ভারত কোনদিনই বিশ্বের টপ টেন কান্ট্রিতে যেতে না পারে । সুভাষ থাকলে একদিন ভারত ব্রিটেনের ওপর দাদাগিরি করবে । বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশ ভেবেছিল ভারতের মতো বৃহৎ দেশ সুভাষচেন্দ্রর নেতৃত্বে থাকলে একদিন আমাদের ওপরে উঠে বশ হয়ে যাবে কারণ ভারতের আছে বিপুল সম্পদ , মেধা , দরকার একজন যোগ্য নেতা । সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে ভারত অপ্রতিরোধ্য হয়ে যাওয়ার আগে তাকে অকেজো করে দাও । সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে সুভাষ থাকলে কাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতো, সুভাষকে সরিয়ে দিলে কাদের লাভ । হয়তো, কোনও কোনও দেশ সুভাষকে সহায়তা করতো কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের জয়লাভের ফলে এবং অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রের চোখরাঙানিতে কেউ সুভাষকে সহায়তা করার সাহস পাননি । 
                          আগুন আর শত্রুর শেষ রাখতে নেই । সুভাষ যাদের স্বার্থের প্রতিবন্ধক তারা সুভাষকে মুক্ত অবস্হায় রাখবেনা এটা একটু তলিয়ে ভাবলেই বোঝা যাবে, এরজন্য তথ্যপ্রমাণ দরকার নেই । তাই, গুমনামি বাবা, অমুক সাধু, তমুক সাধু এগুলো আইওয়াশ করা গল্প ছাড়া কিছু নয় । ব্রিটিশের নজরবন্দি থেকে পালানো আর সিংহের গুহা থেকে পালানো এক । সেটা আর কেউ না জানুক ব্রিটেন জানে । সুভাষচন্দ্রের জনভিত্তি কতটা শক্তিশালী সেটা হরিপুরা ও  ত্রিপুরি কংগ্রেসে বোঝা গিয়েছিল । এইরকম একজন ব্যাক্তিকে গোপন চুক্তি করে আড়াল করে দেওয়া আর তিনি সাধু সেজে তপস্যা করবেন ফুৎকারে উড়িয়ে দিন এইসব আজগুবি গল্প । ঐ গোপন চুক্তিকে তোয়াক্কা না করেই সশরীরে হাজির হতেন ভারতের বুকে । ব্রিটেনের ক্ষমতা নেই চোরের মতো রাতের অন্ধকারে করা চুক্তি দেখিয়ে সুভাষকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে এরকম দাবি করা ।
                         সুভাষের পরিবারবর্গকে সেরকমভাবে কোনদিন দাবি করতে দেখা যায়নি এই অর্ন্তধান রহস্য উদঘাটন করার জন্য । কেন সেটা জানা নেই । 
                          তাঁকে যে অন্য কোনও দেশের কারাগারে গোপনে বন্দী করা হয়েছিল এব্যাপারে কোনও সংশয় নেই । স্বাধীন ভারতেও একাধিক হাই প্রোফাইল নেতার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন আছে । শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে যে নার্স ইঞ্জেকশন দেয় তাকে গায়েব করে দেওয়া হয় । সঞ্জয় গান্ধীর ব্যাক্তিগত বিমান দুর্ঘটনা বিতর্কিত । লাল বাহাদুর শাস্ত্রী তাসখন্দে গিয়ে মাংস খেতে গিয়ে গলায় হাড় আটকে মারা যান, এরকম মৃত্যু আদৌ পসিবিল কিনা প্রশ্ন আছে ।
                         নেতাজী সংক্রান্ত ফাইলগুলো এতদিন প্রকাশ না করার কারণ বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি । কিন্তু চুক্তির একটা মেয়াদ থাকে । সেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আবার বৃদ্ধি করা হয়েছে কারণ বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হবে এই যুক্তিতে । তাহলে, এটা নিয়ে আর কোনও সংশয় থাকার কথা নয় যে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যু আষাঢ়ে গল্প ছাড়া কিছু নয় । শুধু যেটা এখনও প্রশ্ন তাহলে তাঁকে কোথায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল , তাঁর শেষ পরিণতি কি , সেটা জানা যেতো যদি ফাইলগুলো প্রকাশ্যে আনা যেতো কিন্তু বারবার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বাড়ানো হচ্ছে । কতটা ষড়যন্ত্র হয়েছিল সেটা অনুমেয় ।

No comments:

Post a Comment

বাংলায় এই প্রথম করোনা মোকাবিলায় বসানো হল স্যানিটাইজেসন টানেল ।

কলকাতা পুরসংস্থার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের তরফে এই প্রথম শহরে  এক সাথে বসানো হল  দুটি স্যানিটাইজেসন টানেল ,পাটুলি ও রামগড় বাজারে।এই টানেলে প্রবেশ ...